সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি:
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ঔরসজাত সন্তানকে ঈদের দিন কাছে পেতে এক হতভাগ্য পিতার আর্তনাদ। সন্তানকে কাছে পেতে ঘুরছে দারে দারে। একমাত্র কন্যাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ঈদ উদয়াপন করতে এবং কন্যার সঠিক পিতৃ পরিচয় পেতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন হতভাগ্য ওই পিতা।
জানাগেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের সুনীল চন্দ্র চৌধুরীর ছোট মেয়ে ঐশ্বরিয়া চৌধুরী ডলির সাথে তার ১৫ বছর প্রেমের সম্পর্কর সূত্র ধরে প্রেমিকা ডলি তার ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে “দোলা খানম” নাম রেখে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ি কাজীর মাধ্যমে আগৈলঝাড়া উপজেলার পশ্চিম সুজনকাঠী গ্রামের মৃত ওয়াজেদ সরদারের ছেলে মো. ইলিয়াস সরদার এরসাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তারা আগৈলঝাড়াতেই বসবাস করে আসছিলো। তাদের দাম্পত্য জীবনে ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। নাম রাখা হয় “ঐশ্বরিয়া জুনিয়র ইলা”। ২০১৭ সালের ৩ জুন সাংসারিক বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-ঝাটির কারনে ডলি ওরফে দোলা খানম মেয়ে ইলাকে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। প্রায় ১০ বছর সংসার করার পর ডলি ওরফে দোলা খানম স্বামী ইলিয়াছ সরদার কে ডিভোর্স দেয়।
এব্যাপারে হতভাগ্য পিতা ইলিযাছ সরদার সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ১০ বছর সংসার করার পরে ২০১৭ সালের ৩ জুন সাংসারিক বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-ঝাটির কারনে আমার স্ত্রী ডলি ওরফে দোলা খানম আমার একমাত্র মেয়ে ইলাকে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে দোলার বাবার পরিবার সদস্যদের পরামর্শে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। সন্তান সহ স্ত্রী নিখোঁজের ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। যার নং ১৮৭ (০৫-০৬-১৭)। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৫ বছর পর স্ত্রী দোলা ও একমাত্র কন্যা সন্তানের খোঁজ মেলে তার বোন জামাতার ফরিদপুরের বাড়িতে। নিজের স্ত্রী-সন্তানের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের সাথে দেখা করতে চাইলে দোলার বোন জামাতা ও তার স্ত্রী (দোলার বড় বোন) আমার স্ত্রী ও সন্তানের সাথে কোন কথা বলতে ও দেখা করতে দিচ্ছে না। বিগত পাঁচ বছর একমাত্র কন্যাকে দেখিনা। এবছর ঈদে আমার মেয়ের সাথে আমার বাড়িতে ঈদ করতে চাই।
ইলিয়াছ সরদার আরও বলেন, আমার মেয়ের লেখাপড়ার জন্য আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ৪নং মডেল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০০৮০৬১০২৪৭১০০৭৫২ ক্রমিক নম্বরে ইলার জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়। জন্ম বিন্ধনে “ঐশ্বরিয়া জুনিয়র ইলার জন্ম তারিখ ২৫ অক্টোবর- ২০০৮, পিতার নাম মো. ইলিয়াচ সরদার, মাতার নাম দোলা খানম লেখা হয়।
দোলার বোন জামাতা প্রভাব খাটিয়ে মেয়ে ঐশ্বরিয়া জুনিয়র ইলা’র নাম পরিবর্তন করে ফরিদপুর সদর পৌরসভা থেকে আর একটি জন্ম সনদ তৈরির করে। পৌরসভার ওই জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০৮২৯২৬০০৮১৪৮০২২। ওই জন্ম সনদে জন্ম তারিখ ঠিক রেখে “ঐশ্বরিয়া জুনিয়র ইলা’র নাম পরিবর্তন করে “ঐশ্বিকা চেীধুরী” বাবার নাম মো. ইলিয়াচ সরদারের স্থানে “অমিত চৌধুরী” করা হয়। ইলিয়াচ সরদারের স্ত্রী ডলি ওরফে দোলা ফরিদপুর পুলিশ লাইন্স হাই স্কুলে বর্তমানে শিক্ষকতা করছে এবং একমাত্র মেয়ে ইলা ওই স্কুলের প্রভাতী শাখায় ৯ম শ্রেনিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করছে। ফরিদপুর জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার ও ফরিদপুর পুলিশ লাইন্স হাই স্কুলের সভাপতি আলীমুজ্জামানের সহায়তায় এবং প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে এসকল তথ্যের প্রমান পেয়েছি। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার মেয়ে ঐশ্বরিয়া জুনিয়র ইলাকে যে কোন সময় হত্যা বা গুম করা হতে পারে। আমার মেয়ের নাম পরিবর্তন ও পিতার নাম পরিবর্তন করায় ওই মেয়ে যে আমার তার কোন প্রমান থাকলো না। কোন দূর্ঘটনা ঘটে গেলে আমি কোন আইনি কোন ব্যাবস্থা নিতে পারবকিনা তাও জানিনা। এবছর ঈদে আমার মেয়ের সাথে আমার বাড়িতে ঈদ করতে চাই এবং একমাত্র কন্যাকে ফিরে পেতে ও ঔরসজাত একমাত্র কন্যার সঠিক পিতৃ পরিচয় পেতে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ইলিয়াছ সরদারে স্ত্রী দোলা (ডিভোর্সি) মুঠোফোনে জানান, সাংসারিক বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-ঝাটির কারনে আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। ওর সাথে এখন আর আমার কোন সম্পর্ক নাই। মেয়ে তার সাথে দেখা করতে চায়না তাই দেখা হয় না। বোন ও বোন জামাতার বা পরিবারের কারো কোন হাত নেই। ইলিয়াছ সরদার আমার পরিবারের লোকজন ও আত্মিয়দের দোশারফ করা হচ্ছে।
নাম পরিবর্তন করে জন্ম সনদ তৈরীর ব্যাপারে বলেন, আমার মেয়ের ইলিয়াছ নামটা ভাল লাগে না তাই অমিত চৌধুরী নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়েছে। পরে ইলা’র বাবা (ইলিয়াছ) নিজের নাম এভিডেভিট করে ইলিয়াছ মেয়েকে দেয়া ‘অমিত চৌধুরী’ নাম ব্যবহার করবে। ওর দেয়া নাম ব্যবহার করে জন্ম সনদ করা হয়েছে।